বিডিলাইভ রিপোর্ট: আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ এবং
সি'। রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। আর দুধকে আমরা সুষম খাদ্য
হিসেবেই বিবেচনা করি।
তবে আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেলে মানুষ
বিষক্রিয়া হয়ে মারা যায়-এ রকম একটি ধারণা প্রচলিত আছে। বেশিরভাগ মানুষই
অনেক সময় ছোটদের এ খাবার একসঙ্গে খেতে নিষেধ করেন। তবে আসলেই কি এ রকম হয়?
তাহলে জেনে নিন আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেলে যা হয়....... বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, 'আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়ে কেউ মারা যায় এই ধারণা ভুল'। এগুলো এক ধরনের ফুড ট্যাবু বা খাদ্য কুসংস্কার।
তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'আনারস একটি এসিডিক এবং টকজাতীয় ফল'। দুধের মধ্যে যেকোনো টকজাতীয় জিনিস দিলে দুধ ছানা হয়ে যেতে পারে বা ফেটে যেতে পারে। এটা কমলা ও দুধের বেলায় বা লেবু ও দুধের বেলাতেও ঘটে।
ফেটে যাওয়া দুধ খেলে খুব বেশি হলে বদ হজম, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ– এ ধরনের সমস্যা হতে পারে, তবে বিষক্রিয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, খালি পেটে আনারস খেলে তাদের এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
একই বিষয়ে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার ও মেডিসিন বিভাগ ডা. শ আ মোনেম জানান, 'এমন কখনো দেখিনি যে দুধ-আনারস একসঙ্গে খেয়ে মানুষ মারা গেছে'। এটা একটা কুসংস্কার। আমরা তো অনেক সময় ডেজার্ট, কাস্টার্ড বা স্মুদিতে আনারস-দুধ একত্রে মিশিয়ে খাই। এগুলো খেলে তো কোনো সমস্যা হয় না।
অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, 'আনারস একটি এসিডিক খাবার'। আর দুধ হলো অ্যালকালাইন বা ক্ষার। দুধ যদি পাস্তুরিত না হয়, তবে কাঁচা দুধ ও আনারসের সমন্বয়ে শরীরে বিক্রিয়া হতে পারে। দুধের সঙ্গে আনারসের সঠিক সমন্বয় না হলে শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের বেলাতেও একই বিষয় হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সময়ই পাইন অ্যাপেল কাস্টার্ড, ডেজার্ট, পাইন অ্যাপেল স্মুদি, পাইন অ্যাপেল মিল্ক সেক, পাইন অ্যাপেল সালাদ, পাইন অ্যাপেল ইয়োগার্ট ইত্যাদি খাই'। এতে সমস্যা হয় না। কারণ এগুলোর মধ্যে খাদ্যের সঠিক সমন্বয় থাকে এবং নিয়মমাফিক বা সঠিক নিয়মে বানানো হয়।
আর হয়তো এক গ্লাস দুধ খেলেন, পাশাপাশি আনারস খেয়ে নিলেন তাহলে সঠিক খাদ্যের সমন্বয় হয় না। যার ফলে পাতলা পায়খানা, বদ হজম, এসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তবে বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা নেই।
তবে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'আনারস আর দুধ বিরতি দিয়ে খাওয়াই ভালো'। দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। নয়তো অনেক সময় পেটে গিয়ে হজমের সমস্যা হতে পারে। তবে যদি সঠিক নিয়মে খাবার বানানো হয় এবং সঠিক খাদ্যের সমন্বয় থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।
দুধ ফুটিয়ে নিলে বা প্রসেস করে নিলে টক্সিটিক বিষয়টি আর থাকে না, তখন খাওয়া যেতে পারে। তাই আনারস-দুধ সঠিক নিয়মে এবং সঠিক খাদ্যের সমন্বয়ে খাওয়া যেতে পারে।
No comments:
Post a Comment