Daily Ittefaq:
চাকরি সূত্রে কিংবা ব্যক্তিগত
প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিদিনই আজকাল প্রায় সবাইকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা
কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আর তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মনিটরের দিকে।
কম্পিউটার মনিটরের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে কাজ করার কারণে চোখের নানান সমস্যা
দেখা দিতে পারে। চোখের এ সকল সমস্যা ও উপসর্গকে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম
বলে। গবেষণায় জানা গেছে, যারা প্রতিদিন কম্পিউটারে কাজ করে, তাদের ৮৮ শতাংশ
মানুষ কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বা সিভিএস দ্বারা আক্রান্ত।
কম্পিউটারজনিত চক্ষু সমস্যাগুলো হলো
দৃষ্টি
স্বল্পতা, চোখ জ্বালা-পোড়া করা, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ও চোখে
আলো অসহ্য লাগা। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের
মধ্যে শতকরা ২৫ থেকে ৯৩ ভাগ বিভিন্ন চক্ষু সমস্যায় ভোগেন। দৃষ্টি স্বল্পতা
থাকলে অনেকক্ষণ চক্ষু ব্যবহারে চোখের মাংসপেশী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যারা
কাছে কম দেখেন তাদের একমোডেশন বেশি করতে হয়। এতে চোখের মাংসপেশী সংকুচিত হয়
এবং মাংস- পেশীর উপর বেশি চাপ পড়ে। যে কারণে চোখ ও মাথা ব্যথা করে। চোখের
পলকের মাধ্যমে চোখের পানি চোখের উপরিভাগে কর্ণিয়া ও কনজাংটিভাতে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বাভাবিকভাবে মিনিটে ১২-১৪ বার চোখের পলক পড়ে। কিন্তু কম্পিউটার
ব্যবহারকারীদের মিনিটে মাত্র ৪-৫ বার পলক পড়ে। এতে করে কম্পিউটার
ব্যবহারকারীদের চোখের পানি ঠিকমত চোখের উপরিভাগে কর্ণিয়া ও কনজাংটিভাতে
ছড়িয়ে পড়তে পারে না। চোখের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। এতে চোখ শুষ্ক হয়ে
যায়। ফলে চোখ জ্বালা-পোড়া করে ও চোখে ব্যথা হয়। কখনো কখনো চোখের কর্ণিয়াতে
প্রদাহ হয়।
এ সমস্যা প্রশমনে করনীয়
মনিটর
ব্যবহারের সময় চোখের লেভেল মনিটর থেকে ৪ ইঞ্চি-৮ ইঞ্চি নিচে এবং ২০
ইঞ্চি-২৮ ইঞ্চি দূরে থাকতে হবে। আর মনিটরটা সামান্য উপর দিকে রাখতে
হবে।মনিটরের উজ্জ্বলতা এবং কনট্র্যাস্ট লেভেল চোখের সহনীয় পর্যায়ে রাখা
উচিত। বর্ণের আকার যতটা সম্ভব বড় রাখতে হবে এবং কম্পিউটার স্ক্রিনের
ব্যাকগ্রাউন্ডের রং চোখের পক্ষে আরামদায়ক হওয়া উচিত। বেশি উঁচুতে কম্পিউটার
মনিটর স্থাপন করা উচিত নয়। কম্পিউটার মনিটর এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে
মনিটরের উপরিভাগ ও চোখ একই সমতলে থাকে। চোখের পলকঃ চোখের পলক স্বাভাবিক
অবস্থায় প্রতি মিনিটে ১২-১৪ বার পড়ে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘন ঘন চোখের
পলক ফেলা একটা ভালো উপায়।
আলোর পরিমাণ
ঘরের
আলো এমনভাবে রাখতে হবে যাতে সেই আলো সরাসরি মনিটর বা চোখের ওপর এসে
প্রতিফলিত না হয়। তাই কম্পিউটারটি লাইটের বিপরীত স্থানে স্থাপন করা উচিত।
২০ নিয়ম
কম্পিউটার
ব্যবহার করার সময়, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরের কোন জিনিসের দিকে ২০
সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হবে। প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখ
বন্ধ রাখলেও একই রকম ফল পাওয়া যায়। এ অনুশীলনটি কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ
সময় ধরে কাজ করার সময় চোখে আরামদায়ক অনুভূতি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
কি-বোর্ড
কি-বোর্ড
হাতে রপ্ত হলে ভালো। কিন্তু রপ্ত না হলে কি-বোর্ডকে মনিটরের যতটা সম্ভব
কাছে রাখতে হবে যাতে মনিটর থেকে কি-বোর্ডে চোখের মুভমেন্ট কম হয়।
কম্পিউটার গ্লাস
কম্পিউটারে
যারা কাজ করে থাকেন তাদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে এ গ্লাস। এটা চোখে
অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো, প্রতিফলন পড়া থেকে রক্ষা করবে আর আপনার চোখকে রাখবে
শীথিল। তাই চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে কম্পিউটার গ্লাস ব্যবহার করা ভালো।
বিরতি
কম্পিউটারে
কাজ করার সময় একটানা কাজ করা কখনই ভালো নয়। এজন্য কিছু সময় পর পর বিরতি
নেয়া উচিত। এসময় কম্পিউটার থেকে দূরে গিয়ে, চা খেয়ে, গল্প করে, কখনও মুখে ও
চোখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে, আবার কখনও চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment