Tuesday, November 8, 2016

অ্যাজমার চিকিৎসায় কী করবেন?

ডক্টোরোলা.কম
সাধারণত শ্বাসনালি সরু হয়ে অ্যাজমা হয়। দীর্ঘমেয়াদি এর চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. খান মো. সাইদুজ্জামান। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

অ্যাজমা বলতে আমরা আসলে কী বুঝি?
অ্যাজমা হচ্ছে ফুসফুসের শ্বাসনালির প্রদাহ। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়। এতে করে শ্বাসনালি সরু হয়ে আসে। সংকুচিত হয়ে আসে। শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টের আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে অ্যাজমা হলে শ্বাসকষ্ট হয়।

অ্যাজমার কারণে যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সেটি আসলে বোঝার উপায় কী?
এ ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে রোগীর ইতিহাস নিই। এদের কারো শ্বাসকষ্ট থাকে, কারো কাশি থাকে, কারো বুকে চাপ অনুভব করে, কারো বাঁশির মতো শব্দ হয়। অনেকের আবহাওয়াগত কারণে হয়। অনেকের পরিবারে অ্যাজমার ইতিহাস থাকে। এরপর আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। এর পর কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করি।

কী কী ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যাজমা আছে তা নিশ্চিত করা হয়?
আগে ক্লিনিক্যালি ধারণা করি। মূল কাজ হলো ইতিহাসটা নেওয়া। ইতিহাস নেওয়ার পর তার সংবেদনশীল কিছু আছে কি না, এগুলো দেখি। এরপর শারীরিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। তার শ্বাসনালিতে যে বাতাস প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা আমরা স্টেথেসস্কোপ দিয়ে বুঝতে পারি। কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে বুঝতে পারি। এরপর বুকের একটি এক্স-রে করি। স্পায়োমেট্রি করি। এ ধরনের শ্বাসকষ্টে শ্বাসনালি বন্ধ হচ্ছে, আবার খুলে যাচ্ছে। কারো এমনি খুলে যায়, কারো ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা করি।

অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্টে কারা বেশি আক্রান্ত হয়?
অ্যাজমা বা হাঁপানি বাচ্চাদের বেশি হয়। বয়স্কদের হতে পারে। বংশগতভাবে থাকলে হতে পারে। পারিপার্শ্বিকতাও কারণ হিসেবে কাজ করে। পরিবেশগত কারণে বিশেষ কিছু অ্যালার্জি, যেমন—পোলেন, ধুলাবালি, ফুলের রেণু, বাড়িতে কীটপতঙ্গ বা তেলাপোকার বিস্তার। অথবা শখ করে কেউ কুকুর বা বিড়াল পোষেন, এগুলোর পশম। গরু-ছাগলের বিষ্ঠা, খরকুটো।

রোগী কিসে সংবেদনশীল, এটি বোঝার কি কোনো উপায় রয়েছে?
সংবেদনশীলতা নির্ণয়ের জন্য আমাদের অ্যালার্জি পরীক্ষা রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সংবেদনশীলতা বুঝতে পারি।

রোগীরা কী ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে?
বেশিরভাগ লোকজন যে আসে, তারা কাশি নিয়ে আসে। কারো শ্বাসকষ্ট হয়, কারো বুকের ভেতর খুব চাপ অনুভব করে। কারো বুকের মধ্যে বাঁশির মতো শব্দ হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বলেন যে আমার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছে না। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কাশছে। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে শিশুরা আসে।

সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের করনীয় কি?
এটা তো কোনো জীবাণুঘটিত রোগ নয়। এটি হলো দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ। এ জন্য এর প্রতিরোধের দিকে আমরা বেশি জোর দিই। নেবুলাইজার দিয়ে তাকে সুস্থ করি। এ ক্ষেত্রে অক্সিজেন লাগে। অক্সিজেন দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে রক্ষা করি। যে রোগী যে বিষয়ে বেশি সংবেদনশীল, তাকে সেটি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি।

ব্রঙ্কডাইলেটর হিসেবে কী কী দিয়ে থাকেন? কেননা কখনো দেখা যায় যে যদি রোগীকে ইনহেলারজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়, তারা এটি নিতে চায় না। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আপনাদের পরামর্শ কী থাকেন?
অ্যাজমা শিক্ষাটা হলো মূল। চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে যে এটি নিলে আপনার শ্বাসকষ্ট কমে যাবে। আর ট্যাবলেট ব্যবহারে কষ্ট প্রশমিত হতে একটু সময় লাগবে। আর ইনহেলার যদি আমি সরাসরি শ্বাসনালিতে নিই, তাহলে সমস্যাটা কমে যাবে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটিই আপনার জন্য উপযোগী। ভালো হয়ে যাবেন দ্রুত।

এ ক্ষেত্রে রোগীদের কী ধরনের ইনহেলার দিয়ে থাকেন?
প্রথমে রিলিভার হিসেবে নেবুলাইজার সালবিউটামল দিই। যারা স্বল্পমেয়াদি শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন, তাঁদের অক্সিজেন দিই। এর পর তাঁকে এক ধরনের ইনজেকশন দিই। দিয়ে প্রদাহটা প্রথমে কমাই। দীর্ঘমেয়াদি আমরা ইনহেলার হিসেবে কটিকস্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার দিই।

তাকে কি সারা জীবনই এটি ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর : দীর্ঘমেয়াদি, অনেক দিন ব্যবহার করলে তাকে ভালো রাখবে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করতে হবে।

সঙ্গে কি আর কোনো ওষুধ থাকে?
ইনহেলারের সঙ্গে কিছু ওষুধ থাকে। প্রদাহের জন্য কিছু রাসায়নিক দায়ী। এ জন্য আমরা মন্টিলুকাস ট্যাবলেট ব্যবহার করি।

No comments:

Post a Comment