সংগৃহীত (monitor-bd):
জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম একটি দেশ কিভাবে গোটা
বিশ্বব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে তার বড়
উদাহরণ ইসরাইল। অথচ বিভিন্ন সময় নৈতিক বিকৃতির কারণে তাদের নিজ মাতৃভূমি
থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন রাষ্ট্রে। বছরের পর বছর নির্বাসনে
কাটানোর পরও কোথাও তারা ‘মাটির সন্তান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। এর কারণ
ছিল তাদের অবিশ্বস্ততা, নীতিভ্রষ্টতা এবং অশান্তি সৃষ্টিকারী আচরণ।
ইসরাইলি
তথা ইহুদিদের এটা অবিচ্ছেদ্য প্রতিকৃতি। পৃথিবীতে এটিই একমাত্র জাতি যারা
তিন হাজার বছর ধরে একই নাম, একই ভাষা এবং একই স্রষ্টায় বিশ্বাস করে আসছে,
আর আজ এই ইহুদিদের ধ্বংসাত্মক আচরণের কারণে পুরো পৃথিবীতে বইছে অশান্তির
দাবানল।
ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরাইল
ইতিহাস বলে, ইহুদি ধর্ম -এর সূচনা ঘটে আরবের উত্তরে ভূমধ্যসংলগ্ন
অঞ্চলে। ধারণা করা হয়, সংগঠিত ধর্মগুলোর মধ্যে নিরাকার একেশ্বরবাদের অন্যতম
প্রবক্তা ইহুদি ধর্ম। এ ধর্মের প্রবর্তক ‘মোসেস’। পবিত্র কুরআনে যাকে হজরত
মুসা আ: বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার ওপর নাজিল হয়েছে আসমানি কিতাব তাওরাত।
দুই
থেকে দুই হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়কালের প্রথম দিকে ইহুদিদের মধ্যে একক
স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ছিল না। তখনো তারা ছিল বিশেষত প্রকৃতি পূজারি।
গাছগাছড়া, মরু-পর্বত, ঝরনা, আকাশ, এমনকি পাথরের তৈরী মূর্তি প্রভৃতির পূজাও
প্রচলিত ছিল। ক্রমেই ইহুদিদের চিন্তায় একক স্রষ্টা ইয়াহুয়ার (Yahweh)
কল্পনা প্রতিষ্ঠা পায়। কুরআনে একটি অলৌকিক কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে এ
সম্পর্কে। তার সারকথা হচ্ছে, মুসা নবী মিসরের সীমান্ত এলাকায় সিনাই অঞ্চলে
অবস্থিত ‘হোরেব’ পাহাড়ে প্রথম নিরাকার স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করেন বিশেষ
জ্যোতি বা আলোক উদ্ভাসের মাধ্যমে। ঘটনাটি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ১২৮৫ অব্দে।
এভাবে তিনি দু’বার স্রষ্টার দর্শন পান।
হিব্রু ভাষার প্রচলন
সুদূর
অতীতে ইহুদিদের প্রতিদিনকার ভাষা ছিল হিব্রু। একসময় হিব্রু মৃত ভাষায়
পরিণত হয়। কারণ ইহুদিরা যখন বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাসিত হয়, কালের প্রবাহে
তারা ওই অঞ্চলের ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। ইহুদিদের সবচেয়ে পুরনো এবং
মূল্যবান ধর্মীয় গ্রন্থ (হিব্রু বাইবেল) ছিল তোরাহ এবং তানাখ , যার বেশির
ভাগ ছিল হিব্রু ভাষায় এবং কিছুটা অ্যারামিক (সিরিয়ার ভাষা)। পরে জাতীয় ঐক্য
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হিব্রু ভাষার প্রচলন শুরু হয়।
ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম
ইহুদি
জাতির সঙ্কটকাল শুরু হয় ৫৮৭ খ্রিষ্টপূর্বে। এই বছর থেকেই শুরু হয়
শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর শাসনামল। ইহুদিদের আদি বাসস্থান ভূমধ্যসাগরীয়
এলাকাগুলো পর্যায়ক্রমে শাসন করে ব্যাবিলনীয়, পারসিক, আলেক্সান্ডার, টলেমি
বংশ, মেক্কাবি, রোমান, বিজন্টিক সাম্রাজ্য, আরব মুসলমান, তুর্কি মুসলমান
এবং ব্রিটিশরা।
দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ইহুদিরা বিভিন্ন দেশে আশ্রয়
নেয়। তবে কোনো দেশেই তারা স্থানীয় জনসাধারণের সাথে মিশে যায়নি। নিজেদের
স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার প্রবণতা এবং সাধারণ খ্রিষ্টান কর্তৃক ইহুদিদের
‘যিশুর হত্যাকারী’ রূপে চিহ্নিত করার ফলেই ইহুদিরা খ্রিষ্টানদের সাথে
একত্রে সমাজ গড়ে তুলতে পারেনি। ভালো ব্যবসায়ী বলে এবং সুদব্যবসায়ের মাধ্যমে
প্রায় প্রতিটি দেশেই ইহুদিরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাধান্য
বিস্তার করতে সমর্থ হয়। এটিও খ্রিষ্টানদের রোষের একটি কারণ ছিল। তবে
খ্রিষ্টান দেশগুলোর তুলনায় মুসলিমরা ইহুদিদের সাথে অনেক সহৃদয় ও মানবিক
ব্যবহার করত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়, তার
সাথে নির্বাচনে ব্রিটিশ শ্রমিক পার্টির জয়লাভ ইহুদিবাদীদের মনে নতুন আশার
সঞ্চয় করে। শ্রমিক দলের সদস্যরা সাধারণত ইহুদিবন্দী সমর্থক এবং ১৯৩৯ খ্রি:
শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য রক্ষণশীল সরকারকে আক্রমণ করে আসছিল; শ্বেতপত্রের
দ্বারা ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আগমন সীমিত করে। তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিবন্দীদের
হতাশ করে। বিরোধী দলের সদস্য মিসরের সমাজতান্ত্রিক আর্নেস্ট বেভিন
ইহুদিবাসীর অধিকার সংরক্ষণের তৎপর থাকেন কিন্তু বিভিন্ন আন্দোলনের মুখে
গ্রেট ব্রিটেন আরবদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ঝুঁকি নিতে পারে না।
১৯৪৫
খ্রি: আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান অবিলম্বে ফিলিস্তিনে এক
লাখ ইহুদি উদ্বাস্তু গ্রহণ করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিমেন্ট এটলিকে
আদেশ দেন। বিনিময়ে এটলি ফিলিস্তিনে সমস্যা সমাধানে মার্কিনিদের অংশগ্রহণের
আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং সমস্যাটিকে
পর্যালোচনার জন্য একটি ইঙ্গ-মার্কিন কমিশন লন্ডন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও
ফিলিস্তিনে পাঠায়।
ইউরোপে ইহুদিদের দুরবস্থা নিরসনের জন্য কমিশন
এক লাখ ফিলিস্তিনে প্রবেশের অনুমতি চায় কিন্তু এটলি প্রতি মাসে দেড় হাজার
ইহুদিকে আসার অনুমতি দেয়। এ অনুপাতে এক লাখ ৮০ হাজার ইহুদি ধারাবাহিকভাবে
ব্রিটিশ আমলের শেষ পর্যন্ত প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করে।
ব্রিটিশরা
যতই প্যালেস্টাইন থেকে সরে আসতে থাকে, আরব ও ইহুদিদের মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে
ততই সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে বিকেলে মার্কিনপন্থী
ইহুদি নেতা ডেভিন বেন গুরিয়ন তেল আবিব এই ইসরাইল রাষ্ট্রের পত্তনিক
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করেন। পরদিন ১৫ মে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অবসান ঘটে।
ঘোষণার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নবঘোষিত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়।
ইহুদিরা কেন এত শক্তিশালী?
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতিতে ইহুদি লবি
অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হয়। ইহুদি লবির প্রধান
কাজ হচ্ছে ইসরাইলের তথা ইহুদিদের সর্বাধিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করা।
ইসরাইল বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও
অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তির প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রে
নির্বাসনে থাকা ইসরাইলের পক্ষে এ পর্যায়ে আসা সম্ভব হতো না বলেও অনেকে মনে
করে।
ইসরাইলকে বেষ্টন করে আছে ২১টি আরব দেশ, যার অনেকে এর
অস্তিত্ব স্বীকার করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদিদের বলা হয়
সবচেয়ে শক্তিশালী জনগোষ্ঠী। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভোট ব্যাংকের বড় অংশ
ইহুদিরা। যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ অর্থাৎ ছয় থেকে সাত মিলিয়ন
ইহুদি, যারা মোট সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিক। এই জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ বাস করে
১২টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে, যাদের বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ স্টেটস। উল্লেখ্য,
ইহুদিদের ভোট সব সময় এক দিকে যায়। যারা তাদের জন্য কাজ করবে তাদের ভোট
দেয়। তাই সহজেই ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারে তাদের পছন্দমতো প্রেসিডেন্টকে।
আবার এমনও দেখা যায়, যারা ইহুদি নয় কিন্তু ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তাদের সংখ্যা ধরলে ইহুদিরাই সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক। এটা হলো অনানুষ্ঠানিক
ইহুদি লবি, যা আনুষ্ঠানিক ইহুদি লবির অতিরিক্ত।
১৯৫১ সালে
প্রতিষ্ঠিত দি আমেরিকা-ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি যুক্তরাষ্ট্রে
ইহুদিদের আনুষ্ঠানিক লবি হিসেবে কাজ করে থাকে। ইহুদিদের স্বার্থ উদ্ধারের
জন্য সংগঠনটি মার্কিন কংগ্রেস ব্যবহার করে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। ফলে
স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিরোধিতা করলেও অনেক সময় তেমন কোনো কাজ হয় না। বর্তমানে
আমেরিকার বিদেশনীতি উপরি উক্ত সংগঠনের দ্বারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রসঙ্গ এলেই
সংগঠনটির তৎপরতা বেড়ে যায়। এর বার্ষিক বাজেট ১৩ মিলিয়ন ডলারের মতো। ইহুদি
লবির প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অব্যাহতভাবে
ইসরাইলকে অন্ধ সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
এত সব
রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও আরো কিছু দিক দিয়ে তারা প্রভাবশালী। পৃথিবীতে এক কোটি
৪০ লাখ ইহুদি। এর মধ্যে ৭০ লাখ আমেরিকায়, ৫০ লাখ এশিয়ায়, ২০ লাখ ইউরোপে এবং
এক লাখ আফ্রিকায়। পৃথিবীতে ইহুদি এবং মুসলিমদের অনুপাত ১ঃ১০০। অর্থাৎ একজন
ইহুদির বিপরীতে এক শ’ জন মুসলিম। এর পরও মুসলিমদের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ
ক্ষমতাবান ইহুদিরা। এর কারণ হিসেবে বলা যায় সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি সব দিক দিয়েই ইহুদিরা এগিয়ে।
টাইমস ম্যাগাজিনের
জরিপে গত শতাব্দীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব এবং বিজ্ঞানী হলেন আলবার্ট
আইনস্টাইন। যিনি একজন ইহুদি। সিগমন ফ্রেইড মনোবিজ্ঞানের জনক। তিনিও একজন
ইহুদি। এ ছাড়া আছে অনেক স্বনামধন্য ইহুদি বিজ্ঞানী। যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে
বিশাল অবদান রেখেছে। বেনজামিন রুবিন (টিকার সুই), জোনাস স্যাক (প্রথম পোলিও
টিকা), অ্যালার্ট সেবিন (রক্তস্বল্পতার প্রতিষেধক), বারুচ ব্লামবার্গ
(হেপাটাইটিস-বি)। এ ছাড়া আছেন কার্ল মার্কস, পল স্যামুয়েলসন, মিল্টন
ফ্রেইডম্যান, পল এহব্লিচ এবং আরো অনেকে।
নোবেল প্রাইজের দিক
দিয়েও এগিয়ে আছে ইহুদিরা। এলি মেচনিকোফ নোবেল প্রাইজ পান সংক্রামক জীবাণু
আবিষ্কার করে। স্ট্যানলি কোহেন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ভ্রণবিদ্যায়। এ ছাড়া
যারা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তারা হলেন বার্নার্ড কাটজ,
অ্যান্ড্রু স্ক্যালি, অ্যারোন বিক, জর্জ পিনকাস, জর্জ ওয়াল্ড ও উইলিয়াম
কোল্ফ প্রমুখ। ১০৫ বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ইহুদির মধ্যে ১৫ ডজন নোবেল প্রাইজ
পেয়েছে আর মুসলমানরা পেয়েছে মাত্রইতনটি (শান্তি পুরস্কার ছাড়া)।
চিকিৎসাবিজ্ঞান
ছাড়াও পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিনিয়োগকারীরাও ইহুদি। যারা বিখ্যাত
ব্র্যান্ডের মালিক। এর মধ্যে আছে রালফ লরেন (পোলো), লিভাইস স্ট্রস (লিভাইস
জিনস), হাওয়ার্ড স্কোল্টজ (স্টার বাকস), সারজি ব্রিন (গুগল), মাইকেল ডেল
(ডেল কম্পিউটার), লেরি ইলিসন (ওরাকল), ইড রবিনসন (বার্সকিন অ্যান্ড
রবিনসন), বিল রোজেনবার্গ (ডোনকিন ডোনাটস) এবং আরো অনেকে।
এ ছাড়া
বিভিন্ন রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোও দখল করে আছে ইহুদিরা।
রিচার্ড লেবিন (ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট), হেনরি কিসিঞ্জার
(আমেরিকার মন্ত্রিসভার সদস্য), ক্যাসপার ওয়েনবার্গ (আমেরিকার
প্রতিরক্ষামন্ত্রী), ম্যাক্সিন লিটভিনোভ (সোভিয়েত ইউনিয়নের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী), ডেভিন মার্শাল (সিঙ্গাপুরের প্রথম চিফ মিনিস্টার),
ইয়েভগিনি প্রিমাকভ (রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী), জর্জ স্যামপেইও (পর্তুগালের
প্রেসিডেন্ট), জন ডিউচ (সিআইএ’র পরিচালক), ও পিয়েরি মেন্ডেস (ফ্রান্সের
প্রধানমন্ত্রী) প্রমুখ।
মিডিয়াতেও ছড়িয়ে আছে ইহুদিরা। বিভিন্ন
জনপ্রিয় পত্রিকা, স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলগুলোর উচ্চপদে আসীন আছেন তারা।
উলফ ব্লিটজার (সিএনএন), বারবারা ওয়াল্টার (এবিসি নিউজ), ইউগেনা মেয়ার
(ওয়াশিংটন পোস্ট), হেনরি গ্রুনওয়াল্ড (টাইম ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর),
ক্যাথেরিন গ্রাহাম (ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটর), জোসেফ লিলিয়েল্ড (নিউইয়র্ক
টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর), ম্যাক্স ফ্রাংকেন (নিউইয়র্ক টাইমস)।
বৈজ্ঞানিক
গবেষণার দিক দিয়েও এগিয়ে ইহুদিরা। এদের মধ্যে আছেন স্ট্যানলি মেজোর। যিনি
প্রথম ‘মাইক্রো প্রসেসর চিপ’ আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া আছেন লিও জিলার্ড
(নিউকিয়ার চেইন রিঅ্যাক্টর), পিটার স্কোল্টজ (অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল),
চার্লস এলডার (ট্রাফিক লাইট), বেননো স্ট্রাস (স্টেইনলেস স্টিল), ইমিল
বার্লিনার (টেলিফোন মাইক্রোফোন) ও চার্লস জিনসবার্গ (ভিডিও টেপ রেকর্ডার)।
পৃথিবীর
ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাতাদের তালিকায় প্রথমে আছেন একজন ইহুদি জর্জ সোরোস।
তিনি চার বিলিয়ন ডলার দান করেন যা ব্যয় হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন
ওয়াল্টার এনেনবার্গ। তিনিও একজন ইহুদি। তিনি দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান
করেছেন, যা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক শ’ পাঠাগার। এ দাতাদের তালিকায় আরো আছেন
স্পিট, ক্রজেলবার্গ ও বোরিস বেকার।
বিনোদন জগৎ থেকেও তারা দূরে
সরে নেই। বলিউডের বিখ্যাত অনেক প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতাও ইহুদি। বলিউডের
প্রতিষ্ঠাতাও একজন ইহুদি। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকদের মধ্যে আছেন স্টিফেন
স্পিলবার্গ, মেল ব্রুকস, ওলিভার স্টোন, এরোন স্পেলিং, নিল সিমোন,
অ্যান্ড্রু ভেইনা, মাইকেল ম্যান, মিলোস, ফরম্যান, ডগলাস ফেয়ার ব্যাংকস ও
আইভ্যান রিটম্যান।
কোনো জাতির উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা।
এ দিক থেকেই বেশি এগিয়ে আছে তারা। আর পেছনে পড়ে আছে মুসলমানরা। সমগ্র
পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা ১,৪৭৬,২৩৩,৪৭০ যার মধ্যে এশিয়ায় এক বিলিয়ন, ৪০০
মিলিয়ন আফ্রিকায়, ৪৪ মিলিয়ন ইউরোপে, ৬ মিলিয়ন আমেরিকায়। প্রতি পাঁচজনে একজন
মুসলমান। একজন হিন্দুর বিপরীতে দুইজন মুসলমান। একজন বৌদ্ধের বিপরীতে দুইজন
মুসলমান। সংখ্যায় মুসলমানরা বেশি হওয়ার পরও কেন এত দুর্বল? এর কারণ হিসেবে
দেখা যায়, ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট ওআইসি এবং অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০০; অর্থাৎ ৩০ লাখ মুসলমানের জন্য একটি
বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য দিকে আমেরিকায় এর সংখ্যা ৫,৭৫৮টি।
২০০৪ সালে
সিঙ্গাপুরের জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা
তৈরী করে। সে তালিকায় মুসলমান দেশগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। এ
ছাড়া ইউএনডিপি’র সমীক্ষায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলোতে শিক্ষার হার
৯০ শতাংশ এবং ১৫টি উন্নত খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ। এ
দিক দিয়ে কোনো মুসলমান রাষ্ট্রে শিক্ষার হার ১০০ শতংশ নয়। এই রাষ্ট্রগুলোতে
৯৮ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ মুসলিম রাষ্ট্রে এর হার ৫০ শতাংশ।
৪০ শতাংশ খ্রিষ্টান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আর মুসলিম বিশ্বে এর হার ২ শতাংশ।
উন্নত
মুসলিম রাষ্ট্রে ১০ লাখ মুসলমানের মধ্যে ২৩০ জন বিজ্ঞানী। কিন্তু
যুক্তরাষ্ট্রে এর সংখ্যা চার হাজার এবং জাপানে পাঁচ হাজার। পুরো আরব বিশ্বে
৩৫ হাজার গবেষক। এর মধ্যে শুধু আরবে প্রতি ১০ লাখে ৫০ জন আর খ্রিষ্টান
রাষ্ট্রগুলোতে এর সংখ্যা এক হাজার। মুসলিম বিশ্ব গবেষণায় এবং উন্নয়নে ব্যয়
করে মোট জিডিপি’র ০.২ শতাংশ আর খ্রিষ্টানরা ৫ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়,
মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার অভাব অর্থাৎ জ্ঞানচর্চায় অসমর্থ।
জ্ঞান
বিকাশের বড় দু’টি মাধ্যম পত্রিকা ও গ্রন্থ। মুসলিম বিশ্বে প্রতি এক হাজার
জনে একজন সংবাদপত্র পড়ে আর ১০ লাখ লোকের মধ্যে একজন গ্রন্থ পড়ে। এ থেকে আরো
বোঝা যায়, মুসলিমরা জ্ঞানবিকাশে ব্যর্থ।
মোট রফতানিতে
ইলেকট্রনিকস পণ্যের সংখ্যা জ্ঞান প্রয়োগের একটি বড় নিদর্শন। পাকিস্তানে মোট
রফতানির ১ শতাংশ ইলেকট্রনিক পণ্য। সৌদি আরবে ০.৩ শতাংশ, কুয়েত, মরক্কো এবং
আলজিরিয়াতে ০.৩ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে ৫৮ শতাংশ। এই রফতানি সমীক্ষা থেকে
স্পষ্ট বোঝা যায়, মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান প্রয়োগেও ব্যর্থ।
কোনো
জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের ওপর। মজার ব্যাপার হলো, ৫৭
সদস্যবিশিষ্ট ওআইসি’র মোট জিডিপি ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কম। শুধু আমেরিকায় এর
পরিমাণ ১২ ট্রিলিয়ন ডলার। চীন ও জাপানে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তেলসমৃদ্ধ সৌদি
আরব, কুয়েত ও কাতারে একত্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। স্পেনে এক ট্রিলিয়ন ডলার এবং
থাইল্যান্ডে ৫৪৫ বিলিয়ন ডলার। এ সমীক্ষা থেকেই বোঝা যায় যে, মুসলমানরা
শিক্ষার অভাবে পিছিয়ে আছে সব দিক থেকে।
No comments:
Post a Comment