শীতের এই সময়ে শিশুরা যে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে, তা কিন্তু বেশির ভাগই নিউমোনিয়া নয়। ভাইরাসজনিত এই রোগের নাম ব্রংকিউলাইটিস।
ব্রংকিউলাইটিসকে অনেকে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করেন। ফুসফুস হলো উল্টানো গাছের মতো। গাছের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা বিস্তারিত হয়ে পাতায় শেষ হয়। পাতার বোঁটায় প্রদাহ হলে (ভাইরাসের কারণে) এটাকে বলে ব্রংকিউলাইটিস। আর পাতায় প্রদাহ হলে নিউমোনিয়া। সুতরাং দুটি এক অসুখ নয়। ব্রংকিউলাইটিস দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। এতে নাক দিয়ে পানি পড়ার পর কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। জ্বরের মাত্রা কম থাকে, বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়। রক্ত পরীক্ষায় কোণ অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায় না, কিন্তু ভবিষ্যতে শিশু আবারও আক্রান্ত হতে পারে। পক্ষান্তরে নিউমোনিয়া যেকোনো বয়সে হতে পারে। এতে শিশুর খুব জ্বর হয়, অসুস্থতা চেহারায় প্রতিফলিত হয়, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। বুকের এক্স-রে করলে কালো ফুসফুসে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। রক্ত পরীক্ষাতে শ্বেতকণিকার মাত্রা বেড়ে যায়। সেরে উঠতে সময় লাগে।
ব্রংকিউলাইটিসে কিন্তু বেশির ভাগ শিশুকে বাড়িতে রেখেই চিকিত্সা করা যায়। তবে সুস্থ শিশুদের ব্রংকিউলাইটিসে আক্রান্ত শিশু থেকে সরিয়ে রাখতে হবে। দিনের বেলায় রোদ উঠলে বাচ্চাকে খোলামেলা জায়গাতে রাখুন। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল আর নাক বন্ধ হয়ে গেলে নরমাল স্যালাইন (লবণপানি) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভিক্স, বাম দেওয়া যাবে না। অহেতুক নেবুলাইজার কিংবা যন্ত্রের সাহায্যে কফ পরিষ্কারের নামে সাকশান দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এ সময় তরল খাবার, বিশেষ করে বুকের দুধ ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। খুব বেশি কাশি না হলে সপ্তাহে ২-১ বার গোসল করাতে পারবেন, অন্য সময় কুসুম গরম পানিতে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। সিগারেট, মশার কয়েল ও রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন। ভাইরাসজনিত এই রোগে কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। তবে শ্বাস কষ্ট খুব বেশি হলে, বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে গেলে, খিঁচুনি হলে, ঠোঁট নীল বা কালো হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment