লেখক : ডা. শাকিল মাহমুদ, সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।
আজকের সুস্থ-সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যৎ
কর্ণধার এই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার।
এর
সঙ্গে চাই স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি
পূর্ণ ফাস্টফুডে শিশুদের না অভ্যস্ত করা। কেননা, ফাস্টফুড থেকে ওজনাধিক্য,
কিডনির সমস্যা, ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
শিশুরা যে কারণে ফাস্টফুড খায়
১. ব্যস্ততার কারণে অনেক অভিভাবক বাসায় শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে পারেন না। এতে শিশুরা ফাস্টফুডে বেশি আসক্ত হয়।
২. পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে কোনো স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকায়
নিজেরাও শিশুর সামনে ফাস্টফুড খায়। আর অনুকরণপ্রিয় শিশুরা ফাস্টফুড খেতে
এটা অনুকরণ করে।
৩. ফাস্টফুডের সহজপ্রাপ্যতা শিশুদের এর প্রতি অভ্যস্ত বেশি করে।
৪. ফাস্টফুড নিয়ে টিভিতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন শিশুদের এ বিষয়ে প্রভাবিত করে।
ফাস্টফুডের অভ্যাস পরিহার করার উপকার
ফাস্টফুডে যেহেতু ক্ষতিকর স্যাচুরেটেট, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও রং থাকে, তাই এটি মানবদেহে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
১. ফাস্টফুডের ক্ষতিকর উপাদান না খাওয়ার জন্য শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
২. শিশুর বৃদ্ধি ভালো হবে।
৩. শিশুর হাড় ও মাংসপেশির গঠন মজবুত হবে।
৪. ফাস্টফুড না খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য শিশুরা মেধাবী ও প্রাণবন্ত হয়।
৫. ফাস্টফুড না খাওয়ার জন্য ভবিষ্যতে শিশুদের ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ,
ওজনাধিক্য, কিডনি রোগ, ক্যানসারসহ নানা রোগের বিভিন্ন ঝুঁকি কমবে।
বাচ্চাদের ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস ছাড়াবেন যেভাবে
১. ফাস্টফুডের অভ্যাস দূরে রাখতে হলে চাই পারিবারিক বাড়তি সচেতনতা।
২. শিশুকে সব সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করুন।
৩. শিশুর জন্য সব সময় স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি রাখুন, যাতে ক্ষুধার সময় সেগুলো হাতের কাছে থাকে এবং খেতে পারে।
৪. শিশুদের সঙ্গে ফাস্টফুডের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করুন, যাতে অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুডের প্রতি আগ্রহ না হয়।
৫. নিজের ঘরে ফাস্টফুড না রেখে পুষ্টিকর খাবার রাখুন এবং শিশুকে খেতে বলুন।
৬. শিশুর সামনে আদর্শ হোন। শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই তাদের সামনে ফাস্টফুড না খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
৭. শিশুকে আনন্দিত হয়ে বা পুরস্কার হিসেবে কখনো ফাস্টফুড কিনে দেবেন না।
৮. শিশুর স্কুল-কলেজে নাশতা ও দুপুরের খাবারে নজর রাখুন। স্বাস্থ্যকর
খাবারের নির্দেশ দেন এবং প্রয়োজনে বাসা থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ
করুন।
৯. শিশুকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার আগে বাসায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান। এতে শিশুর ক্ষুধা কম লাগবে এবং ফাস্টফুডের প্রতি আগ্রহ কমবে।
১০. শিশুদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুড কিনতে হাতে টাকা না দিতে শিশুর টিফিন বক্সে বাসায় বানানো বিভিন্ন মজাদার খাবার দিন।
১১. বাসায় বানানো খাবারের সময় শিশুর পছন্দ বা অপছন্দকে গুরুত্ব দিন। এতে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
১২. টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খাদ্যপুষ্টি নিয়ে আলোচনার
মাধ্যমে ফাস্টফুডের ক্ষতিকর দিক বেশি বেশি প্রচার করে শিশুকে ফাস্টফুডের
অভ্যাস হতে দূরে রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment