উৎসঃ আরটিএনএন:
২৬ রজব রাতে পবিত্র মেরাজ। আখেরি নবী হজরত
মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) মহান আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঊর্ধ্বাকাশে গমন
করেন এবং তার দিদার লাভ করেন। প্রত্যক্ষ করেন সপ্ত আকাশ, বেহেশত, দোজখসহ
আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য।
সপ্ত আকাশে অবস্থানকারী নবী-রাসূলগণের
সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন। ফেরেশতা হজরত জীবরাইল (আ:) কে দেখেন তার
নিজ অবয়বে। আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে আসেন উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ
নামাজের বিধান।
রাসূল
(সা.) এর মেরাজ তথা ঊর্ধ্বকাশে ভ্রমণ ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান
কর্মটি ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাই রাতটি মুসলমানদের কাছে
খুবই মর্যাদাপূর্ণ।
মহানবী (সা.) এর জীবনের এই যুগান্তকারী ঘটনার
শানে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায় এ রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ
নফল নামাজ, ইবাদত করে থাকেন। দিবসটি তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন
বর্ণনা থেকে জানা যায়, শবে মেরাজের সঠিক তারিখ নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও
হিজরতের কয়েক বছর আগে ঘটে এ ঘটনা। বেশির ভাগ মত অনুযায়ী ২৬ রজব রাত অর্থাৎ
২৭ রজব এশার নামাজের পরই ঘটে মেরাজের ঘটনা। তখন নবী করিম (সা:) হজরত উম্মে
হানির (রা:) ঘরে শায়িত ছিলেন।
জিবরাইল (আ:) এসে তাকে ঊর্ধ্বকাশে
গমনে আল্লাহর নির্দেশনার কথা জানান। সাথে সাথেই শুরু হয় ভ্রমণ। তিনি
প্রথমে বোরাক নামে একটি বাহনে মক্কা মোকাররমা থেকে পবিত্র মসজিদ আলআকসায়
যান।
পবিত্র কুরআনে সূরা বনি ইসরাইলের শুরুতে এই বর্ণনা রয়েছে।
সেখানে দুই রাকাত নামাজ শেষে তিনি ঊর্ধ্বকাশে গমন শুরু করেন। এই ভ্রমণে
প্রতিটি আসমানে অবস্থানরত প্রধান ফেরেশতাদের সাথে তার দেখা হয়। পরে বায়তুল
মামুর নামক স্থানে ফেরেশতাদের নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়েন।
সিদরাতুল
মুনতাহা নামক স্থানে পৌঁছে মহানবী (সা.) কে বহনকারী বোরাক থেমে যায়।
জিবরাঈল (আ:) ওই স্থানের ওপরে যাওয়ার ব্যাপারে তার অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এরপর
রফরফ নামে আরেকটি কুদরতি বাহন এসে রাসূল (সা.) কে আরশে মোয়াল্লায় পৌঁছে
দেন। সেখানেই আল্লাহর সাথে রাসূল (সা.) এর দিদার তথা সান্নিধ্য লাভের ঘটনা
ঘটে।
নবুয়তি দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা লাভ এবং আল্লাহর
সৃষ্টি কৌশল অবলোকন করার পর ফজরের নামাজের আগেই তিনি আবার আল্লাহর সেই
কুদরতি বাহনযোগে ফিরে আসেন।
রাসূল (সা.) এর মেরাজ সশরীরে না
আত্মিক হয়েছিল এ নিয়ে বিজ্ঞানী ও আলেমদের মধ্যে কিছুটা মতান্তর আছে। তবে
বেশির ভাগ আলেম ও ইসলামি গবেষকদের মতে, মেরাজ ছিল একটি বাস্তব ঘটনা।
আল্লাহ
তায়ালা বিশেষ ব্যবস্থায় এ কাজটি করিয়েছেন সশরীরেই। যদি আত্মিক বা স্বপ্নেই
এ ঘটনা ঘটত তাহলে এ নিয়ে এত আলোচনা বা একে স্বীকার -অস্বীকারের প্রশ্ন আসত
না।
সুরা বনি ইসরাইলের আলোকে মেরাজের শিক্ষা:
(১) শিরক না করা
--- আল্লাহর সাথে দ্বিতীয় কাউকে মাবুদে পরিণত করো না, অন্যথায় নিন্দিত ও অসহায়-বান্ধব হারা হয়ে পড়বে৷ (বনি ইসরাইল-২২)
(২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যাবহার করা
তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেন,
--- তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো,
--- পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো৷ যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো।
--- আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলে (বনি ইসরাইল-২৩,২৪)
(৩) তাওবা করা
--- তোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কি আছে৷ যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে৷ (বনি ইসরাইল-২৫)
(৪) আত্নীয়ের হক আদায় করা
--- আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও৷ (বনি ইসরাইল-২৬)
(৫) অপব্যায় না করা
--- বাজে খরচ করো না৷ যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ৷ (বনি ইসরাইল-২৭)
(৬) গরীব অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো
--- যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও৷ (বনি ইসরাইল-২৮)
(৭) কৃপন বা বেহিসেবী না হওয়া
--- নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে।
তোমার রব যার জন্য চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন৷ তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন৷ (বনি ইসরাইল-২৯,৩০)
(৮)সন্তান হত্য না করা
--- দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না৷ আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও৷ আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ৷ (বনি ইসরাইল-৩১)
(৯) ব্যাবিচার না করা
--- যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ৷ (বনি ইসরাইল-৩২)
(১০) অন্যায় ভাবে হত্যা না করা
--- আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না৷ আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি৷ কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়, তাকে সাহায্য করা হবে৷ (বনি ইসরাইল-৩৩)
(১১) ইয়াতিমের সম্পদ আত্নসাদ না করা ও ওয়াদা পুরন করা
--- ইয়াতীমের সম্পত্তির ধারে কাছে যেয়ো না, তবে হ্যাঁ সুদপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়৷, প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে৷ (বনি ইসরাইল-৩৪)
(১২)ওজনে কম না দেয়া
--- মেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে দাও এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো৷ এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই উত্তম৷ (বনি ইসরাইল-৩৫)
(১৩) অন্ধ ও আনুমান নর্ভিরতা থেকে মুক্ত থাকা
--- এমন কোনো জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না সে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই৷ নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ (বনি ইসরাইল-৩৬)
(১৪)অহংকার না করা
--- যমীনে দম্ভভরে চলো না৷ তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে। এ বিষয়গুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটির খারাপ দিক তোমার রবের কাছে অপছন্দনীয়৷ (বনি ইসরাইল-৩৭,৩৮)
No comments:
Post a Comment